শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

বাহুবলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনে তেলেসমাতি কান্ড

নিজস্ব প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পশ্চিম জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে ‘তেলেসমাতি’ কারবার ঘটেছে। স্কুলের অর্থ আত্মসাতের সুবিধার জন্য প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় রোববার (০৪ অক্টোবর) বাহুবল উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। উল্লেখ্য, স্কুলটি উপজেলার পূর্ব জয়পুর গ্রামে অবস্থিত।

সংশ্লিষ্টর বলেছেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্কুলের পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্য নিজের পছন্দমত লোকদের নিয়ে সভা ডাকেন প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন। পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্য সভায় সব অভিভাবক ও স্থানীয় বিশিষ্টজনদের উপস্থিতির বিধান থাকলেও তারা দাওয়াতই পাননি। প্রধান শিক্ষকের ওই অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ওই দিন সভা থেকে বেরিয়ে যান সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি মকসুদ আলী মেম্বার ও দাতা সদস্য বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য্য।

প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, স্কুলের টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বরাবরে অভিযোগ দেন পূর্ব জয়পুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেন।

বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জারি হওয়া আদেশে বলা হয়েছে, পূর্ব জয়পুর গ্রামে অবস্থিত পশ্চিম জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠনে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্তে বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হল। তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, বাহুবল উপজেলা সমবায় অফিসার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার। যত দ্রুত সম্ভব কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই আদেশে।

এ বিষয়ে খাদিজা খাতুনের সঙ্গে কয়েকদফা চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, একই অভিযোগ বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির প্রধান সৈয়দ খলিলুর রহমানের কাছেও দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি গ্রামের একটি প্রতিনিধি দলও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে।
জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান বলেন, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না। এছাড়া আমি দুই পক্ষকে বলেছি শিক্ষা কমিটির বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হবে। দুই পক্ষ যাতে শান্ত থাকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার যে অভিযোগ এসেছে তার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওদিকে, একটি সূত্র জানিয়েছে, কমিটি গঠনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে পূর্ব জয়পুর গ্রামের একটি প্রতিনিধি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীর দপ্তরেও যোগাযোগ করে। সংসদ সদস্যের দপ্তর থেকেও আশ^াস দিয়ে বলা হয়েছে, কমিটি গঠনের কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।

পূর্ব জয়পুর গ্রামবাসীর পক্ষে আব্দুল রহিম (অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য) বলেন, স্থানীয় মেম্বার কদ্দুছ আলীকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন স্কুলটিকে ধ্বংস করছেন। এই স্কুলে কোনো পড়াশুনা হয় না। কিভাবে সরকারি টাকা মেরে খাওয়া যায় সেটি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, গত কয়েকবছরের মধ্যে স্কুলে সরকার থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা এসেছে। এই টাকায় স্কুলের কি উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা এলাকাবাসীরা দেখছি না। এঅবস্থায় নতুন ভবন করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এই ভবন নির্মাণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা মেরে খাওয়ার জন্য একটি নতজানু ও ভঙ্গুর এবং অশিক্ষিত লোকজন দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন। কমিটিতে ভঙ্গুর ও অশিক্ষিত লোকজন থাকলে প্রধান শিক্ষকের সরকারি টাকা মেরে খেতে সুবিধা হবে। কিন্তু এখানে এসব অন্যায় চলবে না বলেও জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com